টানা ৪ দিন পর উপকূলে ফিরেছে আশার আলো

চার দিনের টানা বৃষ্টি ও দুর্যোগের পর শনিবার (৩১ মে) সকালটা ছিল এক স্বস্তির শ্বাস। ঘুম ভাঙতেই কলাপাড়ার আকাশে দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত সেই সূর্যের, যে আলো শুধু আকাশ নয়, জাগিয়ে তুলেছে উপকূলের মানুষকেও। শুরু হয় সাধারণ মানুষের কর্মব্যস্ত জীবন।
চার দিন ধরে রাত্রি-দিন এক করে চলা ঝড়-বৃষ্টি আর অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত ছিল পটুয়াখালীর উপকূলীয় জনপদ। ঘরবাড়ি, রাস্তা, খেত সবই ছিল প্লাবিত। তবে আজ সকাল থেকে দেখা মেলে সূর্যের, আর তাতেই আশার আলো দেখেন কৃষক, শ্রমজীবী ও মাছচাষিরা।
বৃষ্টির বিরতিতে গৃহস্থরা ফেরেন ঘরের উঠোনে, কৃষকরা নামেন খেত-খামারে। যদিও মাঠভরা ফসল এখনো অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত, তবু প্রাণপণে আবার শুরু হচ্ছে জীবনের চাকা। সবজি চাষিরা গাছে গাছে ছিটান ওষুধ, কাটেন আগাছা। এবার আম চাষিদের ক্ষতির পরিমাণটা একটু বেশিই হয়েছে।
টানা ৪ দিন পর উপকূলে ফিরেছে আশার আলো
স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস গাজী বলেন, চার দিন পরে একটু রোদ পেয়ে মনে হচ্ছে আবার নতুন করে শুরু করা যাবে। জমিতে এখনো অনেক জায়গায় পানি আছে, তবে শুকাতে শুরু করেছে। আবারও যদি বৃষ্টি হয় তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
উপজেলার মৎস্য বিভাগ জানায়, জোয়ার ও জলাবদ্ধতায় পুকুর ও ঘেরভরা মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মৎস্যচাষিরা ঘের মেরামত ও মাছ রক্ষা কার্যক্রমে নেমে পড়েছেন। আশা করছি, এই সংকট খুব তারাতাড়ি কেটে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস অফিস বলছে, বর্তমানে মাঠে তেমন বেশি একটা ফসল না থাকলেও আম এবং কিছু কিছু যায়গায় ধান রয়েছে। ধানের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি, তবে আম বাগানগুলোর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ আম বাগানের গাছ ভেঙে গেছে এবং ঝড়ে কাঁচা-পাকা আমগুলো পরে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর এই সময়টায় উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। এতে করে উপকূলের অধিকাংশ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ বছর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি না হলেও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র এবং নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের থেকে তিন থেকে পাঁচ ফিট উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আর তাতেই উপকূলী এলাকার অধিকাংশ জায়গা প্লাবিত হয়। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে চার দিন পরে আকাশের রোদ উঠেছে। বর্তমানে আমরা প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার আওতায় আনতে কাজ করছি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করেছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় সম্ভাবনা নাই। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। আপাতত উপকূলীয় এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নাই বলেও জানান তিনি।